
বাণিজ্য মেলার একটি স্টলে তৈরি পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন জোনাকি, সোহেলি, রুমা ও হাই। আর এই স্টলটিতে ক্রেতাদের জন্য বাহারি রঙের পোশাকের সাথে ছিল অন্য আকর্ষণ। এই স্টলটির বিক্রেতারাও ছিলেন মেকাপ-গেটাপে পরিপাটি। অন্যান্য স্টলের মত এই স্টলেও ছিল ব্যাপক ভিড়। এই স্টলে ক্রেতারা যখন বিক্রেতার সাথে কথা বলে তখনই তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়, তারা কারা। তারা অন্য কেউ নয়, তারা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।
মেলার এই তৃতীয় লিঙ্গের বিক্রেতাদের স্টলটির নাম ‘সিঁড়ি হস্তশিল্প’। পুরো নাম সিঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থা। মেলার শেষের দিকে এই স্টলটিতে ভিড় আরো বেড়েছে। এই স্টলের বিক্রেতারা তৃতীয় লিঙ্গের হলেও তাদের সাথে এবং ক্রেতাদের সাথে কোনো প্রকার জড়তা দেখা যায়নি। অন্যান্য স্টলগুলোর মতই এই স্টলেও ছিল ক্রেতা সমাগম।
এই ব্যতিক্রমধর্মী স্টলটি জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের থ্রি পিস, ওয়ান পিস, টু পিস, নকশি কাঁথা, বেড কাভার, কুশন কাভার, জায়নামাজ ইত্যাদি। সিঁড়ি জামালপুরের একটি সংগঠন। জেলা সদরের গোবিন্দবাড়ি এলাকায় এর অফিস। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৬০ জন, আর এদের সদস্যদের সিংহ ভাগই হস্তশিল্প তৈরির কাজে জড়িত। তারা সবাই ব্লক বুটিক, হাতের কাজ, শেলাই, হস্তশিল্প ও দর্জির কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
একটা সময়ে এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গুলো অন্যদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা তুলতো। আর তাই তাদেরকে দেখলে অনেকেই ভয় পেত এবং তাদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত। কিন্তু এই বছরের বাণিজ্য মেলার এই স্টলটির দৃশ্যপট আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মানুষ গুলোও পাল্টে যাচ্ছে। তারাও তাদের আচরণকে পাল্টে নেমেছেন গ্রহণযোগ্য জীবিকা অর্জনে। এখন তারা নিজেরাই সৎ পথে উপার্জন করছে। আর তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই ‘সিঁড়ি’ স্টলটি।
এই স্টলটি সম্পর্কে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ‘সিঁড়ি’ স্টলটির বিক্রেতাদের আচরনে কোনো রকমের অস্বাভাবিক কিছু ছিলো না। তাছাড়া ওদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। ঠিক তেমনি এই স্টলের এক বিক্রেতা জানান ক্রেতাদের ব্যবহারে ও আচরনে তারাও অনেক অনুপ্রাণিত। তারা এই ‘সিড়ি’র মাধ্যমে উপরে উঠতে চায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরিফা ইয়াসমিন ময়ুরী একথা জানান। তিনি আরো বলেন, মেলায় যে বিক্রি হচ্ছে তাতে আমরা খুঁশি। আমরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের ইচ্ছা থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েছি, কাজ শিখেছি।
তিনি আরও জানান, নিজেদের পণ্য বিক্রি করার জন্য তাদের কোনো শো-রুম নেই। ঢাকায় একটি শো-রুম দিতে অনেক টাকার প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোও তাদের কোনো ঋণ দিতে চায় না। তাই সরকার থেকে ঢাকায় পণ্য বিক্রি করার জন্য স্থায়ী কোন শো-রুমের ব্যবস্থা করলে তারা উপকৃত হবে।